খাদ্য ও পুষ্টি (Child Nutrition),  খাদ্যাভ্যাস

শিশুর অনাক্রম্যতা

চিকিৎসা শাস্ত্রে ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতা নতুন কোন শব্দ নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা যে সময় দিয়ে যাচ্ছি সেখানে ইমিউনিটির  গুরুত্বের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ইমিউনিটি সমন্ধে আলোচনাও।  আসলে পরিবেশের সঙ্গে মানুষকে বরাবর মানিয়ে চলতে হয় পরিবেশীয় নানাপ্রকার অদৃশ্য জীব এবং পদার্থ মানুষের দেহে নানা ভাবে প্রবেশ করে এবং মানুষের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে কখনো কখনো বিপর্যস্ত করে তোলে  বা  তোলার চেষ্টা করে,  ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস যার  উদাহরণ এদের  বিরুদ্ধে মানুষের দেহ,  যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে  তাকেই বলা হয় Immunity বা অনাক্রম্যতা। পরবর্তীকালে একে Immune System  বা ইমিউনতন্ত্র বলা হয়েছে। Immune System  দু’ভাগে ভাগ করা যায় সহজাত অনাক্রম্যতা বা Innate Immunity  এবং অর্জিত  অনাক্রমতা বা  Acquired Immunity , অনাক্রম্যতা বা  Immunity কি উপায় মানব শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে?  এর বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে  দৈনন্দিন জীবনে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও কিছু সু- অভ্যাস এর মাধ্যমে  আমাদের ইমিউনিটি উন্নত করা সম্ভব।  

অনাক্রম্যতা ও পুষ্টির সম্পর্ক

মানব শরীরের সমস্ত  কোষকে অনুকুল ভাবে কাজ করবার জন্য পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন এবং এই সমস্ত কোষের মধ্যে ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সক্রিয় ইমিউন সিস্টেম বা Active Immune System  সংক্রমনের সময়কালে শক্তির চাহিদা আরো বাড়িয়ে তোলে, যেমন টা হয় viral Fever এর ক্ষেত্রে,  জ্বরের সময় মানব শরীরে শক্তির ক্ষয় অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়,  সুতরাং সঠিক পুষ্টি যুক্ত খাবার  আমাদের ইমিউন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারী কার্যকরী প্রতিরোধক কোষকে বিভিন্ন pathogen এর বিরুদ্ধে  প্রতিক্রিয়া শুরু করবার অনুমতি দেয় এবং প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়ার দ্রুত সমাধান করতে এবং অন্তর্নিহিত দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী  খাবার সমূহ

১২মাস থেকে ৩৬মাস  বয়সী বাচ্চাদের Immune System  ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় এবং  শিশুবিশেষজ্ঞগণ বাচ্চাদের বছরে সাত-আটবার ঠান্ডা লাগাটা স্বাভাবিক হিসেবে ধরেন, শিশুর সম্পূর্ণ immunity System তৈরী হয়  ৭থেকে ৮বছর বয়সে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্য এবং বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় মাথায় রেখে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সঠিক পুষ্টি যুক্ত Healthy and Balance Diet  এর মাধ্যমে  আপনার শিশুর  Immune System  দীর্ঘমেয়াদী উন্নতি  সম্ভব।

আইরন (Iron)– আইরন হিমোগ্লোবিন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লোহিত রক্ত কণিকায় স্থিত প্রোটিন মানব শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে যা শিশুদের স্বাভাবিক সংবেদনশীল অনুভূতি  বিকাশেও সাহায্য করে। দেখা গেছে আইরন এর  অভাব ইমিউনো ফাংশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়,  আপনি আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় আয়রনযুক্ত যে  খাবারগুলো  রাখতে পারেন  ডাল (মুগ, মুসুর, রাজমা), সয়াবিন, ড্রাইফুড,  হোয়াইট বিনস, পালংশাক, ডুমুর, আলু, কুমড়োবীজ, কাবলি ছোলা, মটরশুটি, oats, তিলবীজ  ছোট মাছ, ডিম, ইত্যাদি ।

জিঙ্ক (Zinc): কোষের বৃদ্ধি,  ক্ষত নিরাময় ও কোষ বিভাজনে সাহায্য সাহায্যকারী মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এর মধ্যে জিংক অন্যতম,এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইমিউন সিস্টেম উন্নতিতেও।

ডাল, বাদাম (কাজু, আমন্ড ) দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য  যেমন পনির,  টক দই, ফল, সবুজ শাক সবজি মাশরুম, রসুন, তিল ইত্যাদি দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখলে জিংকের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।

ভিটামিন D: ভিটামিন ডি শিশুদের ইউনিটিতে গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন D এর  প্রধান উৎস সূর্যরশ্মি, দীর্ঘদিন lock down  এ বাড়ি থেকে না বেরোলেও, বাড়ির ছাদে বা উঠোনে সকালের (6am-9amমধ্যে ) রোদে দশ থেকে কুড়ি মিনিট আপনার বাচ্চাকে  অবশ্যই রাখুন বা খেলতে দিন।

এছাড়াও  দুধ, পনির, ডিম, অয়েলি ফিশ, মার্জারিন, কমলালেবুর রস, oat meal, বাটার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

ভিটামিন -C

Vitamin-C জলে দ্রবণীয়  অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। রক্তের শ্বেতকণিকার  বিভিন্ন ইনফেকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য ভিটামিন-C প্রয়োজন। কমলালেবু,  আমলকী,  পাতিলেবু, পেয়ারা, মুসাম্বি, পাকা পেঁপে, আনারস ব্রকোলি, গাজর, টমেটো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

ভিটামিন -A:ভিটামিন A অ্যান্টিবডি তৈরিতে এবং কোষের  এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে  রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

রঙিন সবজি যেমন গাজর,  মিষ্টিআলু, আম, আপেল, তরমুজ, পাকাপেঁপে, পার্সলে, পালংশাক, লেটুস, বাঁধাকপি থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায় এছাড়া প্রাণিজ উপাদান হিসেবে ডিম দুধ, মাছ, চীজ শিশু খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

ভিটামিন -E

প্রধান স্নেহ দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন E, ইমিউন সেল গুলিকে ফ্রি-রেডিক্যালস থেকে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

বিভিন্ন vegetable Oils, আভাকাডো, আমন্ড, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, শশা, ক্যাপসিকাম, সবুজ শাক সবজি, চীনাবাদাম থেকে ভিটামিন -E পাওয়া যায়।

প্রোটিন ( protein ):

প্রোটিন জাতীয় খাদ্য মানব শরীরে গঠন এ অন্যতম ভূমিকা পালন করলেও  অ্যান্টিবডি তৈরি এবং পাশাপাশি সেল ইমিউনিটি সিস্টেম ও সাহায্য করে।

সব  রকমের ডাল, দুগ্ধজাত খাদ্য,  ডিম,  মাছ, মাংস  প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস,  এছাড়াও খাদ্যতালিকায় অ্যামাইনো অ্যাসিড এর  উৎস হিসেবে Ground nut, Walnut, almond দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায়  রাখা উচিত ।

          এই সব খাবারের পাশাপাশি খেয়াল রাখুন  বাচ্চা কে সঠিক পরিমান জল দিচ্ছেন তো?  আর মনে রাখবেন  শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক দু দিনে  বা হঠাৎ তৈরী সম্ভব নয়, তাই দীর্ঘকালীন সুস্থতার জন্য শুরু থেকেই বাচ্চা কে গুরুত্বপূর্ণ খাবার গুলির সাথে সঠিক সময়ে ঘুম ও নিয়মিত খেলাধুলার  অভ্যাস করান।

পড়ার জন্য ধ্যনবাদ।

লিখছেন: প্রখ্যাত Paediatric Nutritionist Dt. Pinky Chatterjee

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *