খাদ্য ও পুষ্টি (Child Nutrition),  খাদ্যাভ্যাস

6 থেকে 12মাস বয়সী বাচ্চাদের উপযোগী পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা

আগের পোস্টে আমরা উইনিং সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলাম মূলত  উইনিং কখন শুরু করা উচিত এর সঠিক সময় নিয়ে একটা ধারণা  পেলেও ঠিক কি পদ্ধতিতে খাওয়ানো যাবে?  রোজকার খাদ্য তালিকায়  কি  কি খাবার রাখবো? এই সাধারণ প্রশ্ন গুলো উদ্রেক হওয়া টা ভীষণ স্বাভাবিক। আজ এর কিছু সমাধান  নিয়ে হাজির হয়েছি সাথে পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা ও প্রস্তুত প্রণালী।

আসলে শিশু কে খাওয়ানোর  সঠিক কোন উপায় বা পদ্ধতি  না থাকলেও, উইনিং পদ্ধতি কে  2 ভাগে ভাগ করা হয় –

1.Baby -led Weaning Approach

2.Traditional Weaning Approach.

Baby-led পদ্ধতিতে শুরু থেকেই বাচ্চাকে নিজে হাতে পছন্দসই খাবার  খেতে উৎসাহিত করা হয়। শক্ত খাবার Finger foods হিসেবে দেওয়া  হয়।  এই পদ্ধতিতে বাচ্চা স্বাধীনভাবে তাড়াতাড়ি নিজে খেতে শেখে, বাচ্চা নিজে স্থির করতে পারে খাবার সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা,  পরবর্তীকালে ওজন বৃদ্ধির মতন সমস্যা কম দেখা যায় এবং বেবি লেড  পদ্ধতিতে আলাদা করে রান্না করার প্রয়োজন হয় না পরিবারের বাকি সদস্যরা যে ধরনের খাবার খায় সেই খাবার বাচ্চাকে দেওয়া যায় এবং পরিবারের সবাই একসাথে খেতে পারে। অনেকগুলো সুবিধা থাকলেও কিছু সমস্যা অবশ্যই রয়েছে প্রথম সমস্যা হয় বাচ্চা কতটা পরিমাণ খাবার খাবে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় এবং অনেক সময় বাচ্চাদের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার মতন সমস্যাও  দেখা যায়।

Traditional  পদ্ধতিতে বাচ্চাকে আপনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন শক্ত খাবারে অভ্যাস করাতে পারেন। এই ক্ষেত্রে খাবারের প্রকৃতি প্রথমে মসৃণ,  গলা খাবার এবং পরবর্তীকালে চটকানো এবং ছোট ছোট টুকরো খাবার দেওয়া হয়।এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই বাচ্চা কতটা পরিমাণ খাবে সেটা বোঝা যায় এবং নানাভাবে খাওয়ানো  সম্ভব, কিন্তু  বাচ্চাকে বেশি খাওয়ানোর মতন একটা সমস্যাও  দেখা যায় এবং দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের পেস্ট খাবার দেওয়ার কারণে পরবর্তীকালে বাচ্চারা  শক্ত বা টুকরো  খাবার চিবিয়ে  খেতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। বেবি লেড পদ্ধতিতে বাচ্চারা যদিও নিজের খাবার নিজেরা খেতে অভ্যস্ত হয় কিন্তু ট্রাডিশনাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের শক্ত খাবার বাচ্চাকে দেওয়া যায় অতএব দেখা গেছে  দুটো পদ্ধতির মধ্যেই কিছু সুবিধা এবংঅসুবিধা রয়েছে তাই যেকোনো ধরনের পদ্ধতির  শুরুতেই  মায়েদের সচেতন হতে হবে।

 অন্নপ্রাশন এর অনুষ্ঠানের  পরেই অর্থাৎ বাচ্চার  ৬ মাস  বয়সের পর থেকে  মায়েরা যে  খাবারগুলি  শুরু করতে পারেন –

Rice Water – পরিবারের সকলের জন্য রান্না করা ভাতের মাড় ফেলে না দিয়ে, শুরুতে ১ থেকে ২ চা চামচ দেওয়া যায়, ধীরে ধীরে চামচ এর পরিমান বাড়ানোও যাবে।

ডাল এর জল মুগ বা মুসুরির  ডালের পাতলা জল  এই বয়সী বাচ্চা দের জন্য পুষ্টিকর  খাদ্য উপাদান। বয়সের সাথে  সাথে ডালের পরিমান ও  ঘনত্ব বৃদ্ধির ব্যাপারে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিৎ।

চাল-ডালের খিচুড়ি:

উপকরণ :

চাল ( গোবিন্দ ভোগ / সেদ্ধ চাল )

মুগ ডাল

ঘী

পদ্ধতি :

2:1 অনুপাতে চাল মুগ ডাল কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন।  কুকারে চার থেকে পাঁচটি হুইসেল দিয়ে নামিয়ে নিন। পেস্ট বানিয়ে ১/২চা  চামচ মতো ঘী দিয়ে হালকা গরম থাকাকালীন  বাচ্চা  কে খাওয়ান।

আপনার বাচ্চা এখন ৭ মাস খেয়াল রাখতে হবে শিশুর প্রোটিন বা অন্যান্য খাদ্য উপাদানের  চাহিদা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তাই এখন বাচ্চা কে দেবো   পুষ্টিযুক্ত মুখরোচক  খাবার-

গুড়  সুজির হালুয়া :

উপকরণ:

2 টেবিল চামচ গুড়

1 কাপ সুজি

জল দু  কাপ

ঘি 1 চা চামচ

পদ্ধতি:

প্যানে ঘি গরম করে সুজি ড্রাই রোস্ট করে নিন।আলাদা পাত্রে জলে গুড় গলিয়ে রস করে নিন।গুড়ের রস এবার সুজির সাথে মিলিয়ে নিন। থকথকে হয়ে এলে ঘী  ওপর থেকে ছড়িয়ে দিন।

সাধারণত বাচ্চারা মিষ্টি পছন্দ করলেও মনে রাখতে হবে আমরা যেমন কেউ মিষ্টি ভালোবাসি আবার কেউ নোনতা।   তাই আপনার বাচ্চার খাবার প্রস্তুতির সময় এই বিষয় মাথায় রেখে রান্না করুন, যেমন প্রয়োজনে আপনি নোনতা সুজি ও দিতে পারেন।

কিছু Finger foods যেমন বিস্কুট, সেদ্ধ গাজরের বা আলুর  টুকরো, শুকনো মুড়ি, অবশ্যই দিন।

লক্ষ করা যায় বাচ্চা দের খাবারে মায়েরা  শুধুই শর্করা জাতীয় খাবার রাখেন অথবা অল্প প্রোটিন জাতীয় খাবার দেন, কিন্তু মনে রাখতে  হবে ভিটামিন বা মিনারেলস ও ততটাই প্রয়োজনীয়, তাই একটু স্বাদের ও পরিবর্তন করে বাচ্চা কে দেওয়া যেতেই পারে এই ধরণের খাবার যাতে ভিটামিন মিনারেলস সমৃদ্ধ হবে যেমন ধরুন

   রাঙা আলু ও মিষ্টি কুমড়ো সেদ্ধ করে তাতে অল্প ডালের জল দিতে আপনার  বাচ্চার মসৃন পেস্ট বানান, ইচ্ছা হলে এক চিমটে লবন ও ব্যবহার করতে পারেন।

চেষ্টা করুন অল্প অল্প করে সবরকমের মরশুমি সবজি (সহজে চটকানো যাবে )বাচ্চার খাদ্য তালিকায় রাখার। শুরু থেকে সবরকমের খাবার খাদ্যতালিকায় থাকলে পরবর্তীতে বাচ্চার খাবারের সুঅভ্যাস তৈরী হয়।

মাস  বয়সী বাচ্চাদের খাবারের ঘনত্ব পরিবর্তন করে মায়েরা খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন..

ডালিয়ার পায়েস / ডালিয়ার খিচুড়ি :

উপকরণ :

ডালিয়া

ফর্মুলা মিল্ক / মুগ ডাল / মুসুর ডাল  / সবুজ কলাই

Butter/ ঘী

মিষ্টির জন্য আখের গুড়।

এলাচ দানা

পদ্ধতি :

ঘন্টা খানেক ডালিয়া ভিজিয়ে রাখুন খিচুড়ি বানালে, ডালিয়া ও  ডাল দিয়ে সেদ্ধ করে অল্প লবন,  butter বা ঘী ১/২চা চামচ সহযোগে গরম গরম বাচ্চা কে দিন।

পায়েস এর জন্য  ভেজানো ডালিয়া জল এ  ফুটিয়ে ঠান্ডা করে আলাদা করে  ফর্মুলা মিল্ক মিশিয়ে দিন, ফর্মুলা মিল্ক না দিতে চাইলে অল্প ছোট এলাচের দানা দিয়ে দিন, আর আপনার শিশু  মিষ্টি পছন্দ করলে ব্যবহার করুন আখের গুড়।

বাচ্চা যখন ১০ ১২মাস বয়সী  আমরা চেষ্টা করবো বিভিন্ন নতুন খাবার এর সাথে বাচ্চা কে পরিচয়  করানোর। সেক্ষত্রে মায়েরা খাদ্য তালিকায় রাখুন অল্প সময়ে তৈরী  মজাদার এবং পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার-

খেজুর চিঁড়ের পায়েস :

উপকরণ :

২ টেবিল চামচ ভেজানো চিঁড়ে।

বীজ ছাড়ানো খেজুর ১-২কাপ

ফর্মুলা মিল্ক ১-২ কাপ

অল্প জল

পদ্ধতি:

প্যানে ১কাপ মতো জল ফুটিয়ে নিন তাতে কুচোনো খেজুর মিশিয়ে সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হয়ে গেলে ভেজানো চিঁড়ে মিশিয়ে দিন। ওভেন থেকে নামিয়ে ফর্মুলা মিল্ক মিশিয়ে বাচ্চা কে দিন।

চাল ডালের খিচুড়ি :

চাল ডালের সাথে  নিন যেকোনো তিন ধরণের সবজি, আর দিন সয়াবিন ।

সবজি সমেত চাল ডাল সয়াবিন  ভালো ভাবে সেদ্ধ করে আলাদা প্যানে অল্প তেল গরম করে, ১/৩ চা চামচ জিরে ১/৪ চা  চামচ  আদা পেস্ট খিচুড়ির সাথে মিশিয়ে গরম গরম বাচ্চাকে দিন।

এছাড়াও হাতে বানানো রুটি, oats, বাদাম গুঁড়ো, তিল  সবজি হিসেবে পেঁপে, লাউ, টমেটো, কাঁচাকলা, পালং শাক, মরশুমি শাক সবজি ,  ডিম,  মাছের নরম  অংশ ইত্যাদি দেওয়া যাবে। একইসঙ্গে  যেকোনো খাবার  শুরু করার সময় অল্প অল্প করে শুরু করবেন। শুরুতেই  বেশি পরিমান খাবার বাচ্চা র হজমের সমস্যা করতে পারে, এই বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য  রাখুন।

  • Hygiene অবশ্যই মেনে চলুন বাচ্চার খাবার প্রস্তুতির সময়।
  • জোরপূর্বক খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
  • বাচ্চারা খাবার অনেক সময় অগাছালো ভাবেই খাওয়া দাওয়া করে তবুও , বাচ্চা কে নিজের হাতে খেতে  উৎসাহিত করুন,এবং খেয়াল রাখুন যেন বাচ্চাদের খাওয়ানোর পরিবেশ শান্ত ও পসিটিভ থাকে।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্স এ জানান।

লিখছেন: প্রখ্যাত Paediatric Nutritionist Dt. Pinky Chatterjee 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *