খাদ্য ও পুষ্টি (Child Nutrition),  খাদ্যাভ্যাস

6 থেকে 12 মাস বয়সী শিশুদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস

জন্মের পর থেকে একজন শিশুর সঠিক যত্ন নিয়ে অধিকাংশ মায়েদের চিন্তার অন্ত থাকে না। সমস্যা সবচেয়ে বেশি শুরু হয় শিশুর খাদ্যাভ্যাস  এর ক্ষেত্রে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর খাদ্য ক্রমাগত পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক,  অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা পুষ্টিবিদরা  যে প্রশ্নের মুখোমুখি হই, তা হলো বাচ্চাকে কি ধরনের খাবার কিভাবে অভ্যাস করাবো? ডাক্তারি শাস্ত্র মতে জন্মের পর থেকে 6 মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ শিশুর আদর্শ খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ছয় মাসের পর থেকে শিশুর শরীরে প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি  উপাদানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।  সেই সময় মাতৃদুগ্ধ যথেষ্ট হয় না প্রয়োজন হয় বদলি/তোলা খাবারের, কারণ সঠিক পুষ্টিযুক্ত খাদ্যই  বাচ্চার বৃদ্ধির চাবিকাঠি।

বদলি খাদ্য/ তোলা খাবার / উইনিং কি?  

Weaning  is defined as ‘as the systematic process of introduction of suitable food of the right time in addition to mother’s milk in order to provide needed nutrients to the baby’(UNICEF 1984).

মোদ্দা কথা হলো এই যে শিশুর ছয় মাসের পর শিশুকে মাতৃদুগ্ধর  পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্য উপাদানের  অভ্যাস করানোকে বলে উইনিং। এই উইনিং শব্দটি এসেছে অতিপ্রাচীন শব্দ “to accustom to” থেকে, Weaning এর অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ে যখন বদলি খাদ্য শুরু করা হয় এবং মাতৃদুগ্ধ ( 0-২বছর)সম্পূর্ন বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত চলতে থাকা।  নির্দিষ্ট সময়েই বদলি খাদ্য শুরু করা উচিত।  সময়ের পূর্বে বা সময়ের পরে হলে, অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের মধ্যে এলার্জি, পুষ্টি ও বৃদ্ধি জনিত নানা ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

আমরা কখন বুঝবো বাচ্চারা শক্ত খাবার গ্রহণের জন্য তৈরি ?

 ৬ মাস বয়সের পর মুখে ভাত বা অন্নপ্রাশন নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে  মাতৃদুগ্ধের  পরিবর্তে শক্ত খাবার যেমন ভাত ডাল অন্যান্য সবজি ইত্যাদি দেওয়া শুরু করা হলেও বিশেষজ্ঞরা আরো কিছু লক্ষনের   প্রতি ও  গুরুত্ব দেন…

  • বাচ্চা ঠিক মতন বসতে পারছে কিনা
  • বাচ্চার মাথার নিয়ন্ত্রণ সঠিক হচ্ছে কিনা
  • বাচ্চা মুখে খাবার ধরে রাখতে পারছে কিনা
  • বাচ্চা খাবার মুখে দিতে আগ্রহী কিনা

 সমস্যাগুলি খুব কম লক্ষ্য করা গেলেও যদি  এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখেন অবশ্যই আপনি আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

  বদলি খাদ্য কিভাবে  অভ্যস্ত রাবেন ?

  • বদলি খাদ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ১-২ চামচ দিয়ে শুরু করা উচিত যতদিন না বাচ্চা একবাটি মত পরিমাণ খেতে পারছে, ধীরে ধীরে তার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
  • প্রত্যেক সপ্তাহে একটি করে নতুন খাবারে পরিচিত করুন, পাশাপাশি অবশ্যই লক্ষ্য রাখুন বাচ্চার নতুন খাবার থেকে কোনরকম অ্যালার্জি বা অন্য কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা,
  • চেষ্টা করুন একবারে একটি খাদ্য দেওয়ার, একসঙ্গে অনেকরকম খাদ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • খেয়াল রাখুন বাচ্চা কে কখনো জোরপূর্বক খাওয়ানোর চেষ্টা না করা হয়।
  • তোলা খাবার প্রস্তুতিতে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য খাদ্যসামগ্রীর নির্বাচন করা এবং অবশ্যই রান্নার কাজে ব্যাবহার্য বাসন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।

 আচ্ছা তোলা  খাবারের প্রকৃতি  কি ধরণের হওয়া  উচিৎ?

 বয়সের বৃদ্ধির সাথে  সাথে শিশুর  খাবারের  গঠন ও প্রকৃতি বদল খুব প্রয়োজন, সঠিক বয়সে খাবারের সঠিক ঘনত্ব শিশুর  বৃদ্ধিতে ও সঠিক খাদ্যাঅভ্যাস  গঠনে সাহায্য করে।

  • Breast Milk :

০-৬ মাস বয়সী বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী,  নয়  থেকে দশ  বার মায়ের বুকের দুধ  দেওয়া যায়।

  • তরল প্রকৃতি তোলা খাবার:

৬ মাসের পর শিশুকে সহজপাচ্য, তরল বা অর্ধ তরল খাবার দিতে হবে,  এই সময় চেষ্টা করতে হবে খাবারের পরিমাণ ও ঘনত্ব আস্তে আস্তে বৃদ্ধি করা এবং দিনে  সাত থেকে আটবার খাওয়ানো যাবে।

  • অর্ধ কঠিন প্রকৃতির তোলা খাবার:

 ৮ থেকে ৯ মাসের বাচ্চাদের এই সমস্ত খাবার সাধারণত ছয়  থেকে সাত  বার খেতে দেওয়া যাবে ,  এবং  বাচ্চার খাবারের স্বাদ এবং আকৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। বাচ্চাদের ১০ মাসের পর চেবানোর ইচ্ছা লক্ষ্য করা যায় তাই বদলি খাদ্য হিসেবে মুড়ি, বিস্কুট,  গাঁজরের টুকরো এই  ধরনের খাদ্য  নিজে হাতে খেতে দিতে হবে এবং সারাদিনের খাবার  ৬ ভাগে ভাগ করে খাওয়ানো উচিৎ।

বদলি খাদ্য শুরু করার আগে মায়েদের যে  বিষয় গুলির জানা উচিৎ:

আপনি আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চার খাবারের মায়ের দুধের সাথে সাথে ফর্মুলা মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন।  তবে গরুর দুধ ১ বছরের আগে দেওয়া যাবে না।

 তরল বদলি খাদ্য হিসেবে বাচ্চাকে ডালের জল,  মুড়ির জল এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি সেদ্ধ করে ভালো করে চটকে ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে স্যুপ হিসেবে বাচ্চাকে দেওয়া যাবে।

৬ মাস বয়সের পর থেকে পাকা কলা দেওয়া গেলেও আপেল নাশপাতি এই  ধরনের ফল  সাত মাস বয়সের পর থেকে শুরু করা উচিত এবং এলার্জি সমস্যা এড়ানো জন্য,  টক ফল যেমন মুসাম্বি, কমলালেবু, বেদনা বাচ্চাকে কে ৯ মাসের পর দেওয়াই যথার্থ হবে।

অর্ধকঠিন খাদ্য হিসেবে গলাভাত, চাল ডালের খিচুড়ি, মুড়ি, সেদ্ধ আলু/মিষ্টি আলু, গাজর, কুমড়ো এছাড়াও সুজি, সাগু এগুলো দেওয়া যেতে পারে।

সর্বশেষ একটা কথা মনে রাখতে হবে বাচ্চাকে সব ধরণের  খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করানো উচিত হলেও মায়েদের  অবশ্যই জানা দরকার কি ধরনের খাবার বাচ্চাদের এই সময়ে  দেওয়া যাবে না।

নিম্নলিখিত খাবারগুলি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন :

  • মধু
  • অর্ধসেদ্ধ ডিম ( Half boiled )
  • ডিমের সাদা অংশ (বাচ্চার আট মাস বয়সের পর ডিমের কুসুমের এক-তৃতীয়াংশ অংশ দেওয়া যায়)
  • লবন
  • চিনি
  • কার্বনেটেড বেভারেজ
  • গোটা বাদাম ( গুঁড়ো করে দেওয়া যেতে পারে )
  • কম fat যুক্ত খাবার(olive oil দেওয়া যাবে )
  • সামুদ্রিক খাবার
  • পশুর মাংস

                                                                                                             ক্রমশঃ…….

 

আমরা আমাদের আজকের পোস্টে উইনিং বা বদলি খাবার কি,  বদলি খাবারের প্রকৃতি কি ধরনের হওয়া উচিত,  বাচ্চাকে বদলি খাবারে কিভাবে অভ্যস্ত করাবেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম।  আগামী পোষ্টে  কিছু সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বদলি খাবারের নাম ও সেগুলির প্রস্তুত প্রণালী,  বাচ্চার খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি  ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

আপনার শিশুর সঠিক বৃদ্ধি, বিকাশ এবং পুষ্টির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আমাদের আগামী পোস্টে নজর রাখুন।

 

 ধন্যবাদ।

 

লিখলেন: 

Dt. Pinky Chatterjee

Consultant Dietitian (Paediatric)

One Comment

  • Sabyasachi Mukhopadhyay

    ব্বা:
    নতুন মা , যারা হয়েছেন তাদের বেশ কাজে লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *