শিশু স্বাস্থ্যের জটিলতা… কি ও কেন
প্রথম প্রকাশের নিবেদন:
প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে অসংখ্য মানুষের সান্নিধ্যে আসার এক অভূতপূর্ব সুযোগ হয়। সুযোগ হয় অগণিত বাবা মায়ের সাথে কথা বলার। তাদের সমস্যা জানার।
শিশু চিকিৎসক হিসাবে আমার সকল রোগীর মা বাবা এবং আমার নিজস্ব আত্মীয়, বন্ধু বান্ধব এমনকি অন্য বিভাগের চিকিৎসক বন্ধুরা পর্যন্ত চেম্বার সহ বিভিন্ন সময়ে তাঁদের শিশুদের নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন করেছেন আমায়।
এটুকু বুঝতে পেরেছি জ্ঞান, শিক্ষা, আর্থিক সঙ্গতি, গ্রাম, শহর নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই নিজেদের শিশুর স্বাস্থ্য, রোগ, পুষ্টি, বৃদ্ধি, ওষুধ, টিকা, স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক লক্ষণ ইত্যাদি সম্পর্কে লক্ষাধিক প্রশ্ন আছে। এবং অবশ্যই সদুত্তর নেই।
নিজের অভিজ্ঞাতায় দেখেছি, যেমন অগণিত মা বাবার শিশু কে কোলে নিয়ে আমার চেম্বার বা আউট ডোর-এর বাইরে চিন্তান্বিত মুখে বসে থাকতে এবং শিশুর কিছুই হয়নি, প্রায় কোনো ওষুধই লাগবে না শুনে হাসি মুখে বেরিয়ে যেতে, তেমনই দেখেছি ভাবলেশহীন মুখে বসে থাকা বাবা মায়ের হঠাৎ মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা – ‘শিশুর রোগ অনেক দূর গড়িয়ে গেছে, ভর্তি করতে হবে’ শুনে।
এই সমস্ত ঘটনা বারংবার নিজে দেখে শুনে, আমাকে সেই একই প্রশ্নের মুখে বার বার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কেন? কেন বাবা মা বাড়ির লোক জানবেন না নিজেদের শিশুর স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো? যেগুলি আগে থেকে জানা থাকলে অযথা হয়রানি, অর্থের অপচয় এবং সর্বোপরি ভয়ঙ্কর মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
একটা সাধারণ উদাহরণ দিই। জ্বর হয়েছে শিশুর, ডাক্তারবাবুর কাছে গেছেন, ওষুধ কিনেছেন, ঠিক মতো খাইয়াছেন। অথচ পরেরদিন অন্য সমস্য শুরু হলো। আবার কাজের ছুটি নিয়ে, পয়সা খরচ করে ডাক্তারবাবুর চেম্বার বা হাসপাতাল। দীর্ঘ্যক্ষন অপেক্ষা করার পর ডাক্তারবাবু শুনেই বলে দিলেন, কোনো চিন্তা নেই, এই ওষুধটা খেলে প্রথম কয়দিন এমন হতে পারে, ওষুধ বন্ধ হলেই ভালো হয়ে যাবে। অথবা কাউকে বললেন খুব ভালো করেছেন নিয়ে এসেছেন, এটা সাংঘাতিক একটা রোগের পূর্ব লক্ষণ।
কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝবেন কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ? অথবা কোন টীকা দেবেন। কোন টীকা না দিলেও চলবে। মা এর কোনো অসুখ বা ঔষধের ব্যবহার বাচ্চার উপর প্রভাব ফেলবে কিনা। শিশুর বৃদ্ধি ঠিক মতো হচ্ছে কিনা। স্তন্যপান ঠিক হচ্ছে কিনা। কি কি খাবার শিশুকে কখন, কোন বয়েসে কত পরিমানে দেওয়া উচিত। কোন জ্বর টা সাধারণ, কোনটা খারাপ।
ছোট বড় রোগের সাধারণ লক্ষণ ও তাদের প্রাথমিক করণীয় জেনে রাখা অবশ্যই উচিত। শিশুর মাথা, চোখ, নাক, কান, গলা, পেট, লিভার, ফুসফুস, হার্ট প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের সমস্যার লক্ষণ ও প্রাথমিক করণীয় জানা থাকলে অনেক সুবিধা হয় বৈকি।
শিশু ঠিক সময়ে সবকিছু শিখতে পারছে কিনা বয়েস অনুযায়ী প্রতিটি মা-এর মনের ভেতরের এক সাধারণ প্রশ্ন। শিশুর কান্না বহু প্রকারের হতে পারে। বেশিরভাগই স্বাভাবিক। কিন্তু কি থাকলে সেই কান্না খারাপ ভাববেন জানা উচিত। শিশুর খাদ্য কিরকম হওয়া উচিত। কোন বয়েসে কোন প্রকারের খাদ্য কেমন পরিমানে দেওয়া উচিত।
এরকম অসংখ্য উদাহরণ হতে পারে। যেগুলো এখানে, পাঠকের পড়ে বোঝার মতো করে লেখার চেষ্টা করা হবে। এরকম ওয়েবসাইট দেশী বিদেশী অগনিত আছে। কিন্তু বাংলা ভাষায় খুব কমই এরকম ওয়েবসাইট আছে যেটি বাংলার শিশুদের ‘ধাত’ অনুযায়ী লেখা। তাই এই প্রয়াস।
ওয়েব সাইটটি যাঁদের জন্য তৈরী বা ব্লগ যাঁদের জন্য লেখা হচ্ছে, সেই দুই বাংলার অসংখ্য মা বাবাকে উৎসর্গ করা হলো। তাঁদের কিছু উপকার হলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক জানব।
পরিশেষে বলি ওয়েব সাইটটিকে যতদূর সম্ভব ত্রূটি মুক্ত ও প্রতিটি খুব ছোট ছোট বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি কোনও সহৃদয় পাঠক কোনও অনিচ্ছাকৃত ত্রূটি বা এমন কোনো বিষয় যা আপনাদের প্রয়োজন বলে মনে হয়, আমাদের প্রতিনিধিদের email-এ জানান তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নাম সহ পরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে।
এই blog টিতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ লেখক, বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লিখবেন। আপনারা comment সেকশানে আপনার মতামত, প্রশ্ন ইত্যাদি আমাদের জানান। আমরা অবশ্যই তাঁদের কথা লিখবো।
স্বাস্থ্য সচেতনতাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। কখনই এখানে লব্ধ জ্ঞান সরাসরি চিকিৎসা হিসেবে প্রয়োগ করবেন না। পেশাদার চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী বা হাসপাতাল থেকেই একমাত্র চিকিৎসা করান।
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
No related posts.
2 Comments
সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়
তোমাদের এই মহতী প্রচেষ্টা সাফল্য লাভ করুক।
Dr. P. K. Bagchi
Thank you for your kind wishes. Regards.