টীকাকরণ

টীকাকরণ – সাধারণ প্রশ্নোত্তর

শিশুর কি টিকাকরণ করা আবশ্যিক?

হ্যাঁ। আপনার শিশুর টিকাকরণ অবশ্যই করা উচিত। এটা আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেনা। এটা শিশুর অধিকারের মধ্যে পড়ে।

শিশুর টিকাকরণ করা কেন দরকার?

টিকাকরণের ফলে আপনার শিশুকে মারণ রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।

টিকাকরণ ও রোগের চিকিৎসা কি একই জিনিস?

রোগ হওয়ার পর তার চিকিৎসা করা হয়। আর টিকাকরণ করা হয় যাতে ওই রোগ আপনার শিশুর না হয়। বলা বাহুল্য রোগ না হওয়া বেশি ভালো।

কোথায় টিকাকরণ করা উচিৎ?

সরকারী ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে বিনামূল্যে অথবা ব্যক্তিগত ভাবে আপনার শিশু চিকিৎসকের কাছে আপনি টিকাকরণ করতে পারেন ।

কি কি টিকাকরণ করা হয়?

Indian Academy of Paediatrics এর তালিকার টিকাকরণ সূচী অনুযায়ী শিশুচিকিৎসক টীকা দেন। National Immunization Schedule অনুযায়ী সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে টিকাকরণ করা হয়।

উপরোক্ত এই দুটির কি পার্থক্য?

একটা সরকারী প্রোগ্রামে হয়। আর একটা আমাদের দেশের শিশু স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ academic body দ্বারা পরিচালিত। IAP schedule এ, সরকারি schedule এর সব টীকা সহ আরো কয়েকটি টীকা বেশি থাকে। অর্থাৎ সরকারি টীকা গুলি নেওয়ার পরও আরো কিছু টীকা ব্যক্তিগত ভাবে নিতে হয়।

সরকারি ও বেসরকারি টিকাকরণের আর কি কি পার্থক্য আছে?

কয়েকটি টীকার কম বেশি ছাড়া তেমন কোনো পার্থ্যক্য নেই। তবে কিছু কিছু টীকার কিছু প্রকারভেদ আছে। যেগুলো ব্যক্তিগত ভাবে নিলে নিবার্চন করার সুযোগ থাকে। সরকারি হলে সেরকম সুযোগ থাকেনা। আর কিছু টীকা অতিরিক্ত থাকে যেগুলো সরকারীতে থাকেনা।

তাহলে কোথায় টিকাকরণ করা উচিত?

সেটা সম্পূর্ণ ভাবে আপনার পছন্দ।

আচ্ছা জন্মের কত সময়ের মধ্যে জন্ম টীকা দিতে হবে?

জন্মের পর শিশু সুস্থ্য থাকলে যত শীঘ্র সম্ভব জন্ম টীকা দিতে হবে। 24 থেকে 72 ঘন্টার মধ্যে দিলেই তাকে জন্মডোজ বলা যায়। তবে 7 দিনের বেশি হলে তাকে আর জন্ম টীকা বলা যাবেনা।

জন্ম টীকা নেয়া হয়নি 7 দিনের মধ্যে। কি করা যাবে?

যখনই সুযোগ পাওয়া যাবে তখনই দেয়া যেতে পারে। সাধারণত 6 সপ্তাহের টিকাকরণের সময় একসাথে দিয়ে দেয়া হয়।

আচ্ছা একসাথে অনেকগুলো টীকা দেয়ার কোনো সমস্যা নেই তো?

না। একইদিনে যতগুলো খুশি প্রয়োজন মতো টীকা দেয়া যায়। এতে কোনো সমস্যা হয়না।

একই পায়ে দুবার ফুটিয়ে ইনজেকশন দেয়া যায়?

হ্যাঁ। দেয়া যাবে। সেইরকম দেওয়ারও নিয়ম আছে। কিভাবে দিতে হবে সেটা যিনি দিচ্ছেন তিনি নিশ্চই জানেন।

টীকার ডোজ কবে কি রকম?

টিকাকরণ সূচীতে সমস্ত লেখা আছে। দয়া করে দেখে নিন। এছাড়াও যেখানে টীকা দিচ্ছেন, সেখান থেকে চার্ট আপনাকে দেওয়া হবে।

টীকা দিলে তার সাইড এফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়না?

হয় বৈকি। জ্বর, ব্যাথা, খেতে না চাওয়া, গা বমি বা বমি, কান্নাকাটি করা, ফুলে যাওয়া, পুঁজ হওয়া, গায়ে rash বেরোনো, এমনকি খিঁচুনী অবধি হতে পারে। তবে গুরুতর সাইড এফেক্ট এতটাই কম হয় যে তা নগন্য।

তাহলে কি সাইড এফেক্ট এর ভয়ে টীকা দেবোনা?

দেখুন কিছু টিকাকরণ করলে, একটু সাধারণ জ্বর, ব্যাথা বাদ দিলে বাকি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় হয়না বললেই চলে। এবার ভাবে দেখুন, বুকে মারাত্মক কফ বসলে, আন্টিবায়টিক কি খাবেন না? যদি একটু পাতলা পায়খানা হয়, সাইড এফেক্টের কথা ভেবে?

মারণ রোগ হোলে ভাল নাকি টিকাকরণ করে একটু জ্বর ব্যাথা হলে ভালো?

কিন্তু যদি বেশি কিছু সাইড এফেক্ট হয়?

সেই সম্ভাবনা অনেকটা আপনার মাথার উপর চলতে থাকা ফ্যান টা আপনার মাথার উপর ভেঙে পড়ার যতটা সম্ভাবনা ততটাই। এরপরেও ধরা যাক যদি হয়, (কার কপাল মন্দ বলা সত্যিই মুশকিল) তখন সেটার চিকিৎসা করতে হবে এবং পরবর্তী ডোজ কিভাবে দেয়া যাবে বা আদৌ যাবে কিনা সেই নিয়ে ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করতে হবে।

আচ্ছা এই যে সাধারণ সাইড এফেক্ট গুলো, যেমন জ্বর, ব্যাথা এগুলো তো সবারই প্রায় হয়। তার চিকিৎসা কি?

সাধারণত কোনো চিকিৎসা ছাড়াই এগুলো 2-4 দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এই নিয়ে অনেকগুলো গবেষণাপত্র আছে, যেখানে সবাইকে প্যারাসিটামল দেয়া উচিত কিনা আলোচনা করা হয়েছে। এখনো কোনো সঠিক তথ্য জানা নেই। তবে প্যারাসিটামল অনেকেই দেন। এবং দেওয়া হয়। এব্যাপারে আপনার শিশুচিকিৎসক আপনার শিশুর ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই অনুসরণ করা উচিৎ।

কোনো কারণে কোনো টীকা মিস করে গেলে কি হবে?

টীকার ডোজ মিস করলে কি করতে হবে তার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশ আছে। কাজেই চিন্তার কিছু নেই। কিভাবে, কয়দিন মিস হয়েছে, বাচ্ছার বর্তমান বয়স কত ইত্যাদির উপর নির্ভর করে, নতুন করে নির্দিষ্ট বাচ্চার জন্য নতুন টিকাকরণ সূচী আপনার শিশুচিকিৎসক আপনাকে করে দেবেন।

এর মানে এই নয় যে, আপনি টিকাকরণ নিয়ে কোনো গাফিলতি করবেন। সময়ের টীকা ঠিক সময়ে অবশ্যই দিতে নিয়ে যাবেন।

বাড়িতে অনুষ্ঠান, বাইরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য কোনো টিকাকরণ একটু এগিয়ে পিছিয়ে নেয়া যায়না?

দুটি ডোজ এর মধ্যে 4 সপ্তাহের গ্যাপ আবশ্যিক। কাজেই আগে দিয়ে দেয়ার প্রশ্নই নেই। তবে বিশেষ অসুবিধা থাকলে কয়েকদিন পিছিয়ে দিলে মারাত্মক সমস্যা নেই। শুধু ওই সময়ের জন্য শিশুটি অসুরক্ষিত থাকবে। তাই সময়ের মধ্যে দেয়াই বাঞ্ছনীয়।

টিকাকরণ করেছি। কিন্তু তাও রোগটা হলো। কেন?

এখানে বলে রাখা ভালো সব টীকা সবসময় 100% সুরক্ষা নাও দিতে পারে। এর মানে এই নয় যে টীকা কাজ করলোনা। হয়তো 60-80% সুরক্ষা দিলো। অর্থাৎ না দিলে রোগটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় 100%ছিলো, আর দিলে 20%। এছাড়াও টিকাকরণ করা বাচ্চার রোগ হলেও অপেক্ষাকৃত অনেক কম মারাত্মক আকার ধারণ করে। সহজেই সেরে যায়। রোগের জটিলতা বাড়ে না।

একবার কোনো রোগ হয়ে গেলে তার কি টিকাকরণ আর দরকার?

বেশির ভাগই দরকার হয়। তবে রোগ বিশেষে, রোগ হওয়া ও টিকাকরণের সময়ের উপর নির্ভর করে। আপনার শিশুচিকিৎসক সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সরকারি জায়গায় একটি টীকা আজ নিয়েছি, বেসরকারি জায়গা থেকে কাল অন্য একটি টীকা নিতে পারি?

টীকার রকম ভেদের উপর নির্ভর করে। দুটিই লাইভ ভ্যাকসিন হলে দেয়া যায়না। সেক্ষেত্রে একইদিনে অথবা 4 সপ্তাহ পর নিতে হবে।  অন্য টীকার ক্ষেত্রে সে অসুবিধা নেই। আপনার শিশুচিকিৎসকের পরামর্শ মেনে টীকা দিতে হবে। প্রতিবার টিকাকরণের সময় ঠিক ঠিক history বলবেন।

বাচ্চার শরীর খারাপের সময় টীকা দেয়া যাবে?

সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর, পায়খানা ইত্যাদি তে টিকাকরণ করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এক্ষেত্রে আগে শিশুকে পরীক্ষা করার পর শিশুচিকিৎসকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

কোনো বাচ্চা কে, কোনো টীকা দেয়া যাবেনা – এরকম কি হতে পারে?

হতে পারে। কোনো বিশেষ বিশেষ রোগ থাকলে বা কোনো বিশেষ বিশেষ ওষুধ খাওয়া চলতে থাকলে কিছু টিকাকরণ করা যায়না। এক্ষেত্রেও শিশুচিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই ওষুধ বন্ধ হওয়ার পর কিছু নির্দিষ্ট সময়ের পর সেই টীকা দেওয়া হয়।

চার্ট-এ নেই বা সবাইকে দেওয়া হয়না কিন্তু আমার বাচ্চাকে এক্সট্রা কিছু টীকা দিতে চিকিৎসক বলেছেন। কেন?

অনেক সময় বাচ্চার কিছু বিশেষ রোগ থাকলে বা কোনো বিশেষ অপেরাশন হলে, এক্সট্রা কিছু টীকা দেয়া হয়, যা আর পাঁচটা সাধারণ শিশুকে দেয়া হয়না।

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

একই লেখা Home পেজ-এ ‘টীকাকরণ – সাধারণ প্রশ্নোত্তর’ – এ পাবেন।

Comment-এ আপনার মতামত লিখতে ভুলবেন না।

আর কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই লিখুন। তবে পৃথক পৃথক টিকা নিয়ে বিশদে পরে আরো অনেক পোস্ট আসবে।

6 Comments

  • Sabyasachi Mukhopadhyay

    লাইভ ভ্যাকসিন আর অন্য টিকা র মধ্যে কি তফাৎ
    কোন টিকা কে লাইভ ভ্যাকসিন বলব।

    • Dr. P. K. Bagchi

      Live vaccine is a type of vaccine where live attenuated strain of a vaccine is used. In other words the virus is injected live but with out the property of virulence. What does that mean? It means the live attenuated virus is capable of producing antibody in the recipient but will not cause a major disease. It will mimic naturally acquired immunity by naturally acquired infection in a very milder form, most of the times not even noticeable. Examples amy be MMR, Chicken pox or Varicella etc.

      The killed vaccine, on the other hand is killed virus, as the name says, can only produce antibody and there will not be even minor sub-clinical infection. Examples may be DPT.

      You may find it interesting that vaccines for few diseases have both live and killed variety. Your Paediatrician will choose for your baby, may be after discussion with parents.

    • Dr. P. K. Bagchi

      This is a blog. Please excuse us for personal queries. You may contact our representative through email from the contact page for personalized services like discussion, training/coaching or counselling.

    • Dr. P. K. Bagchi

      …And contact information is already put in contact page or in the profiles of the experts. Thank you for showing interests. Regards.

  • Samik chakraborty

    পাঁচ বছরের বাচ্চা কে কি এখন নিউমোনিয়া র ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *